বাল্যবিয়ের হিড়িক

আইন এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান থাকা সত্ত্বেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিস্থিতির কারণে দেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল মিলছে না। এমন প্রেক্ষাপটে করোনাকালে দেশে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির হার কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে, গতকাল যুগান্তরে একাশিত একগুচ্ছ প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। করোনার কারণে দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সারা দেশে ঝরে পড়েছে বহু শিক্ষার্থী। এ সময় বহু মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। শুধু রাজশাহীতেই ৫ শতাধিক স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে।

বাল্যবিয়ের নেতিবাচক দিকগুলো বহুল আলোচিত। তারপরও বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির প্রধান কারণ অভিভাবকদের অসচেতনতা। বস্তুত আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবেও অনেক অল্পশিক্ষিত অভিভাবক বাল্যবিয়ের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কিছুটা দূরে থাকা মেয়েদের বাবা-মা-অভিভাবকরা তাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বাল্যবিয়েতে আগ্রহী হয়ে উঠত। গত দেড় বছরে পড়াশোনার চাপ না থাকায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অলস সময় কাটিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বহু কিশোর-কিশোরী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেও বহু অসচেতন অভিভাবক কিশোরীদের বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে দারিদ্র্য যুক্ত হওয়ায় কিশোরীদের বিয়ের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অঙ্গীকার করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাল্যবিয়ের মতো সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি, তা বলাই বাহুল্য। এখনো অনেক বাবা-মা-অভিভাবক কিশোরীদের বয়স নিয়ে প্রতিবেশীরা কে কী বলল, তা গুরুত্বসহ বিবেচনা করে। গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ এখনো এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারেনি। এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই বাল্যবিয়ে বাড়ছে।

দেশে বাল্যবিয়ের একটি অন্যতম কারণ কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করা। যেসব এলাকায় এ সমস্যা তীব্র, সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের উদাসীনতার কারণেই অল্পবয়সি কিশোররা বেপরোয়া আচরণ করে থাকে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখনো অনেক অভিভাবক মেয়েদের মূলধারার অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভাবেন না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল মিলবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। পর্যাপ্ত বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি মেয়েদের মূলধারার অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করার জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুয়া জন্মসনদ জোগাড়সহ কারচুপির আশ্রয় নিয়ে অনায়াসেই বাল্যবিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা যায়। কাজেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল পাওয়া কঠিন।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন